ফারুক হোসেন খান: নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে চরটি। এখানে পা রাখতেই কানে বাজবে শোঁ শোঁ শব্দ। মূলত বাতাসে ছৈলাপাতার নাচনে এমন শব্দ তৈরি হয়। মাঝেমধ্যে গর্জন করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে নদীর ঢেউ। সেই গর্জনের সঙ্গে পাখির কলকাকলি মিশে অন্যরকম এক আবহ সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয়, সকাল বেলায় পূর্বগগনে নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা রক্তলাল সূর্য, বেলাশেষে পশ্চিম আকাশে তার হেলে পড়ার দৃশ্য উপভোগ করারও অতুলনীয় স্থান ‘ছৈলারচর’। উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদীতে জেগে ওঠা চরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভিড় করছেন এখানে। যত্নআত্তি করলে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে ছৈলারচর।
চরটিতে রয়েছে লক্ষাধিক ছৈলাগাছ। এই গাছের নাম অনুসারেই চরের নামকরণ হয়েছে। পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ রয়েছে নানা সংকট। তবু সেই সংকট উপেক্ষা করেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম ছৈলারচর পর্যটকের মিলন মেলায় পরিণত হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে এই চর।
ছৈলারচরকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবিতে গত নভেম্বরে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ, সুশাসনের জন্য নাগরিক ও পিস ফ্যাসিলেটর গ্রুপ-পিএফজির যৌথ আয়োজনে ছৈলারচরে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন শেষে বক্তব্য দেন সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ও উপজেলা সুজন সভাপতি অধ্যাপক আবদুল হালিম, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালালুর রহমান আকন, জেলা পরিষদ সদস্য শাখাওয়াত হোসেন অপু ও এসএম আমিরুল ইসলাম লিটন, মিরুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন খান, মঠবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মজুমদার, বেতাগী প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক বিষখালীর সম্পাদক সালাম সিদ্দিকী প্রমুখ।
অধ্যাপক আবদুল হালিম বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এখানে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে উঠলে পর্যটকদের যাতায়াত সহজ হতে পারে। আর এ থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে পারে। আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটটি উপজেলা সদর ইউনিয়নের হেতালবুনিয়া মৌজার অধীন। ৭০ একর জমির ওপর চরটি নদীবেষ্টিত। এখানকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। এলাকাবাসীর দাবি, হেতালবুনিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত পাকা রাস্তা রয়েছে। শুধু চরে যাওয়ার জন্য একটি ঝুলন্ত সেতু এবং চরের মধ্যে কাঠের সেতু করে দিলে পর্যটকরা সহজেই চরে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ২০১৫ সালে ছৈলারচরকে পর্যটন স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সেখানে গভীর নলকূপ ও ঘাটলার ব্যবস্থা করেছে।